রক্তে লেখা পত্র
রাত্রি তখন গভীর। হাসপাতালের করিডোরে পায়ের শব্দ শোনা যাচ্ছে শুধু নার্সদের। কিন্তু কেবিন নম্বর ৭১৭-এ বসে এক বৃদ্ধ লোক চুপচাপ তাকিয়ে আছেন জানালার বাইরে। নাম তার সাগর সেন। তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত ডাক্তার। কিন্তু আজ তার চোখে জল। কারণ, হাতে ধরা সেই চিঠিটি—যা তিনি পেয়েছেন গতকাল, সেটি উল্টে দিয়েছে তার জীবনের সকল বিশ্বাস।
চিঠিটি লেখা তার একমাত্র ছেলে, অভীক সেনের হাতে। যাকে তিনি ভেবেছিলেন মৃত—গত পনেরো বছর ধরে।
তখন ২০০৯ সাল। সাগরের ছেলে অভীক এক সন্ধ্যায় নিখোঁজ হয়ে যায়। পুলিশ বহু চেষ্টা করেও তার হদিস পায়নি। শেষে সবাই ধরে নিয়েছিল ছেলেটি বোধহয় অপহরণ বা খুন হয়েছে। কিন্তু বাবা সাগর সেন হার মানেননি। বুকের ভেতর একটা অদ্ভুত অনুভূতি বলত, "সে বেঁচে আছে, কোথাও না কোথাও!"
পনেরো বছর পর, ২০২৪ সালে, এক রক্তমাখা চিঠি ডাকঘরে এসে পৌঁছায়। চিঠিতে লেখা—
"বাবা, আমি বেঁচে আছি। আমি এমন এক জায়গায় ছিলাম যেখানে সত্য মিথ্যের চেয়েও বেশি অবিশ্বাস্য। আমি ছিলাম মানব পাচারের জালে বন্দি, ভারত থেকে সুদান পর্যন্ত ঘুরেছি। আমাকে নিয়ে গবেষণা চালানো হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, তুমি মরে গেছো। আমি পালিয়েছি। আমি আবার ফিরবো। আমি তোমার ছেলে—সেই অভীক!"
চিঠির কাগজে মানুষের রক্তের দাগ। ডাক বিভাগের তারিখ, দক্ষিণ সুদান থেকে পাঠানো।
সাগর সেন চিঠিটি হাতে নিয়ে চিৎকার করে উঠেছিলেন, "এ তো সম্ভব না! এ তো কল্পনার কাহিনি!"
কিন্তু এইটাই বাস্তব। আর বাস্তব যেন কল্পনার সকল সীমা ছাড়িয়ে গেছে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন