গল্প: হারিয়ে যাওয়া সেই দিনগুলো
গল্প: হারিয়ে যাওয়া সেই দিনগুলো
(একটি নিঃশব্দ কষ্টের গল্প)
ঘরটা নিঃস্তব্ধ।
![]() |
ঘরটা নিস্তব্ধ |
জানালার ধারে রাখা একটি কাঠের চেয়ার—সেই চেয়ারে কেউ বসে না বহুদিন।
তবু, প্রতি সন্ধ্যায়, ঠিক সূর্য ডুবে যাওয়ার পর
এক কাপ চা রাখা হয় সেই চেয়ারের পাশে।
যেন কেউ এসে নেবে, হাতে তুলে নেবে কাপটা—
কিন্তু কেউ আসে না।
ঘরজুড়ে ছড়িয়ে আছে অনেক স্মৃতি,
চুপচাপ থাকা অ্যালবাম, যেখানে একজোড়া চোখ আজও হাসে...
যার হাসিতে কেউ আর প্রাণ খুঁজে পায় না।
একসময় সেই হাসি ছিল কারো জগত, কারো সকাল, কারো সন্ধ্যা।
আজ শুধু ছবি।
আজ শুধু কাঠের ফ্রেমে বন্দী হয়ে
সে মানুষটা থাকে, নিঃশব্দে।
তার যাওয়ার দিনটা ছিল এক গভীর শ্রাবণের বৃষ্টি।
বৃষ্টি নয়, যেন ভাঙা বুকের কান্না ঝরছিল আকাশ থেকে।
হাসপাতালের করিডোরে তখন কেউ দাঁড়িয়ে ছিলো
দুটো হাত ভাঁজ করে, ঠোঁট নীরব,
আর চোখ—চোখে ছিল প্রশ্ন,
“তুমি কি সত্যিই চলে গেলে?”
তারপর কেটে গেছে অনেক দিন,
তবুও টেবিলের ওপর রাখা থাকে সেই চশমা,
যা সে পড়ে গল্প পড়তো চুপচাপ সন্ধ্যায়।
আলমারির ভেতর রাখা একটা নীল ওড়না,
যেটা এখন আর কেউ গায়ে দেয় না—
শুধু মাঝে মাঝে, হঠাৎ করে দরজা খুললে
ওড়নার ভাঁজে মিশে থাকা গন্ধটা মনে করিয়ে দেয়—
সে এক সময় ছিল।
শুধু রাত হলেই সব ব্যথা জেগে ওঠে।
চুপচাপ জানালার ধারে দাঁড়িয়ে কেউ আকাশ দেখে—
দূরে, অনেক দূরে কোথাও যেন একদিন তারা দেখেছিল একসাথে,
যেখানে তারা ভেবেছিল, “চিরকাল থাকবে।”
কিন্তু কেউ চিরকাল থাকে না।
থেকে যায় শুধু কিছু ছোট ছোট জিনিস,
কিছু অলিখিত কবিতা, কিছু অসমাপ্ত চিঠি,
আর কিছু হারিয়ে যাওয়া দিনের গন্ধ।
সেই গল্পগুলো এখন আর কেউ শোনে না।
শুধু ঘরের ভেতর একটা চুপচাপ নিঃশ্বাস,
আর জানালার পর্দা হেলে পড়ে বলে দেয়—
কেউ ছিল, কেউ ছিল একদিন…
আর এখন নেই।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন