নিঃশব্দ মানুষের দীর্ঘশ্বাস
শহরের ভিড়ভাট্টা পেরিয়ে, এক কোণে বসবাস করত রফিক নামের এক মানুষ। সবাই তাকে চিনত, কিন্তু কেউ তাকে সত্যি করে জানত না। বাইরে থেকে সে ছিল হাসিখুশি—দোকানে গেলে হেসে দাম দিত, পাশের বাড়ির ছেলেমেয়েদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিত, রাস্তা পার হতে কারও সাহায্য চাইলে এগিয়ে যেত।
কিন্তু তার ঘরের ভেতরটা ছিল একেবারে অন্য রকম। চারপাশে শুধু নীরবতা। বিছানার পাশে রাখা পুরনো ছবি—যেখানে তার স্ত্রী আর ছোট্ট মেয়েটি ছিল—চোখে পড়লেই বুকটা মোচড় দিয়ে উঠত।
স্ত্রী আর মেয়েকে সে হারিয়েছে এক সড়ক দুর্ঘটনায়। সেই রাতটা যেন রফিকের জীবনকে চিরদিনের জন্য অন্ধকার করে দিয়েছিল।
প্রতিদিন রাত হলে রফিক জানলার পাশে বসে আকাশের দিকে তাকাত। মনে হতো, তার প্রিয়জনরা হয়তো ওখানেই কোথাও আছে। সে মনের ভেতর ফিসফিস করে বলত—
“তোমরা ভালো আছো তো? আমি একা বড্ড কষ্টে আছি।”
কেউ শুনত না, কিন্তু তার বুকের ভেতরে জমে থাকা দীর্ঘশ্বাসগুলো যেন আকাশ ছুঁয়ে যেত।
মানুষ তাকে জিজ্ঞেস করত—
“রফিক ভাই, এত একা একা থাকেন কেন?”
সে শুধু হেসে বলত—
“আমি ভালো আছি।”
কিন্তু সত্যিটা ছিল, সে একেবারেই ভালো নেই।
দিনের আলোয় যতই হাসির মুখোশ পড়ুক, রাতের আঁধারে রফিক ছিল ভাঙা মানুষ। নিঃশব্দ মানুষ। তার জীবনের সবটুকু ব্যথা সে নিজের ভেতরে জমিয়ে রেখেছিল—শুধু একটা প্রশ্ন তার বুক চিরে উঠত প্রতিদিন,
“এত দুঃখ কি একা মানুষ বইতে পারে?”
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন