পোস্টগুলি

জুলাই, ২০২৫ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

গল্প: হারিয়ে যাওয়া সেই দিনগুলো

ছবি
গল্প: হারিয়ে যাওয়া সেই দিনগুলো (একটি নিঃশব্দ কষ্টের গল্প) ঘরটা নিঃস্তব্ধ। ঘরটা নিস্তব্ধ জানালার ধারে রাখা একটি কাঠের চেয়ার—সেই চেয়ারে কেউ বসে না বহুদিন। তবু, প্রতি সন্ধ্যায়, ঠিক সূর্য ডুবে যাওয়ার পর এক কাপ চা রাখা হয় সেই চেয়ারের পাশে। যেন কেউ এসে নেবে, হাতে তুলে নেবে কাপটা— কিন্তু কেউ আসে না। ঘরজুড়ে ছড়িয়ে আছে অনেক স্মৃতি, চুপচাপ থাকা অ্যালবাম, যেখানে একজোড়া চোখ আজও হাসে... যার হাসিতে কেউ আর প্রাণ খুঁজে পায় না। একসময় সেই হাসি ছিল কারো জগত, কারো সকাল, কারো সন্ধ্যা। আজ শুধু ছবি। আজ শুধু কাঠের ফ্রেমে বন্দী হয়ে সে মানুষটা থাকে, নিঃশব্দে। তার যাওয়ার দিনটা ছিল এক গভীর শ্রাবণের বৃষ্টি। বৃষ্টি নয়, যেন ভাঙা বুকের কান্না ঝরছিল আকাশ থেকে। হাসপাতালের করিডোরে তখন কেউ দাঁড়িয়ে ছিলো দুটো হাত ভাঁজ করে, ঠোঁট নীরব, আর চোখ—চোখে ছিল প্রশ্ন, “তুমি কি সত্যিই চলে গেলে?” তারপর কেটে গেছে অনেক দিন, তবুও টেবিলের ওপর রাখা থাকে সেই চশমা, যা সে পড়ে গল্প পড়তো চুপচাপ সন্ধ্যায়। আলমারির ভেতর রাখা একটা নীল ওড়না, যেটা এখন আর কেউ গায়ে দেয় না— শুধু মাঝে মাঝে, হঠাৎ করে দরজা খুললে ওড়নার ভাঁজে মিশে থাকা গন্ধটা মনে করিয়ে দেয়— সে...

গল্প: শিরোনামহীন

ছবি
 শিরোনামহীন লেখক : দুঃখী মানুষ। একটি মানুষ ছিল। না, তার কোনো নাম নেই। যেমন নেই সে হাসে, কাঁদে, বাঁচে এমন কাউকে জিজ্ঞেস করার কেউ। সে একটা ঘরে থাকে—একটা ছোট ঘর, চারদিকে দেয়াল, মাথার উপর ছাদের ফাঁক দিয়ে মাঝে মাঝে বৃষ্টি পড়ে, আর দেয়ালে ঝুলে থাকা একটা ঘড়ি শুধু সময় গুনে। প্রতিদিন সকালে সে উঠে। কেউ ডাকে না, কেউ জিজ্ঞেসও করে না কেমন ঘুমিয়েছে। সে নিজেই নিজের ঘুম ভাঙায়— আর নিজের ছায়ার সঙ্গেই কথা বলে। বাজারে যায়, রান্না করে, আবার খায়। যখন খায়, তখন খাওয়ার টেবিলের একপাশ ফাঁকা থাকে—যেন কেউ ছিল সেখানে, কোনোদিন। আসলে কেউ ছিল না। সে শুধু ভাবে, "যদি কেউ থাকত?" রাত হলেই ঘরটা আরও চুপচাপ হয়ে যায়। চুপচাপ নয়, যেন নিঃশব্দ চিৎকারে ভরে ওঠে। বাইরের কুকুরের ডাকে তার বুক কেঁপে ওঠে— কারণ সেও জানে, একাকীত্ব কাকে বলে। একদিন সে আয়নায় নিজের দিকে তাকিয়ে বলেছিল— "তুই ঠিক আছিস তো?" নিজের প্রতিবিম্বটাও উত্তর দেয়নি। এক রাতে সে হঠাৎ সব লাইট নিভিয়ে দেয়। ঘরের ভেতর শুধু চাঁদের আলো। কাঁধে মাথা রাখার কেউ নেই, কথার জবাব দেওয়ার কেউ নেই, শুধু পুরনো কিছু শব্দ মাথার ভেতর বাজে— "তোমাকে কে চায়?" "তোমার...

ছায়াতীর্থ

ছবি
 গল্পের নাম: ছায়াতীর্থ লেখক: দুঃখী মানুষ সময়: খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০০ বছর | স্থান: হিমালয়ের এক গোপন উপত্যকা সেই সময় পৃথিবী ছিল কুয়াশায় ঢাকা এক অপার রহস্য। মানুষেরা তখনো শব্দ দিয়ে কথা বলত না—চোখের ভাষা, শরীরের নড়াচড়া, আর প্রকৃতির ইশারাই ছিল তাদের যোগাযোগের উপায়। "আরুয়া" ছিল এক বালিকা—তখনকার এক পর্বতকণ্যা, জন্ম হয়েছিল আকাশ-ছোঁয়া পাথরের নিচে, যেখানে ঠাণ্ডা বাতাস গায়ে লাগলে আত্মা কেঁপে উঠত। আরুয়া ছিল আলাদা—সে আকাশের তারা গুনত, গাছের কান্না শুনত, আর রাতের ছায়াকে ভয় না পেয়ে ডাকত "ছায়া-মা" বলে। একদিন রাতের ঘন অন্ধকারে, যখন চাঁদ ছিল না, আর আগুন নিভে গিয়েছিল, পাহাড়ি গুহার ভিতরে এক কালো ছায়া এসে দাঁড়াল। সবাই দৌড়ে পালাল, শুধু আরুয়া দাঁড়িয়ে রইল। ছায়াটি বলল না কিছু, শুধু তার চোখদুটো ছিল যেন আকাশের আগুন। আরুয়া হেঁটে গেল তার দিকে। তারপর নিখোঁজ। তিনদিন পর, সে ফিরে এল—চোখে এক আলোর রেখা, কপালে আঁকা এক অদ্ভুত চিহ্ন—❂ তারপর থেকেই সে ভবিষ্যৎ বলতে পারত। সে বলেছিল, — “হাজার বছর পর মানুষ আগুন দিয়ে আকাশে উড়বে। তারা ভুলে যাবে গাছের ভাষা, মাটি ছোঁয়ার আনন্দ, কিন্তু আবারও একদিন ফিরে আসবে ছায়ার কাছে।”...

গল্পের নাম: "তোমার অপেক্ষায়"

ছবি
 গল্পের নাম: "তোমার অপেক্ষায়" শিরোনাম : রোমান্টিক বর্ষার এক নিঃশব্দ দুপুর। শহরের সব রাস্তা যেন ঝিমিয়ে পড়েছে। জানালার পাশে বসে বইয়ের পাতায় চোখ রেখে শায়লা কেবলই অন্যমনস্ক হয়ে পড়ছে। তার চোখ বারবার ছাদে ওঠা সিঁড়ির দিকে চলে যায়। আজ ঠিক পাঁচ বছর আগে এই দিনে, ঠিক এই সময়ে, প্রথম দেখা হয়েছিল ওদের। সেদিনও বৃষ্টি পড়ছিল, আর অরণ্য ছাতাটা শায়লার মাথার ওপরে ধরে বলেছিল, — "ভিজবেন না, একসাথে চলুন।" সেই দিন থেকেই শুরু। ২. শায়লা আর অরণ্য—দুজন দুই ধরনের মানুষ। অরণ্য ছিল হাসিখুশি, চঞ্চল, সবার সঙ্গে মিশে যায়। আর শায়লা—চুপচাপ, নিজের মধ্যে ডুবে থাকা এক মেয়ের নাম। কিন্তু অরণ্যর ছোঁয়ায় শায়লার ভেতরের রঙগুলো ফুটে উঠতে শুরু করে। তারা একসাথে হেঁটেছে বইমেলায়, একসাথে ভাগ করেছে এক কাপ কফি, সন্ধ্যায় ছাদে বসে তারা দেখেছে দূরের আকাশের তারা। — "একদিন যদি আমি না থাকি?" শায়লার এই কথায় অরণ্য হেসে বলেছিল, — "তুমি থাকো কি না থাকো, আমি তো থাকবো। তোমার অপেক্ষায়।" ৩. কিন্তু সময় সবকিছু বদলে দেয়। অরণ্য চলে গিয়েছিল হঠাৎই—বিদেশে পড়তে। একটা বড় স্কলারশিপ পেয়েছিল। আ...

রক্তে লেখা পত্র

ছবি
রাত্রি তখন গভীর। হাসপাতালের করিডোরে পায়ের শব্দ শোনা যাচ্ছে শুধু নার্সদের। কিন্তু কেবিন নম্বর ৭১৭-এ বসে এক বৃদ্ধ লোক চুপচাপ তাকিয়ে আছেন জানালার বাইরে। নাম তার সাগর সেন। তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত ডাক্তার। কিন্তু আজ তার চোখে জল। কারণ, হাতে ধরা সেই চিঠিটি—যা তিনি পেয়েছেন গতকাল, সেটি উল্টে দিয়েছে তার জীবনের সকল বিশ্বাস। চিঠিটি লেখা তার একমাত্র ছেলে, অভীক সেনের হাতে। যাকে তিনি ভেবেছিলেন মৃত—গত পনেরো বছর ধরে। তখন ২০০৯ সাল। সাগরের ছেলে অভীক এক সন্ধ্যায় নিখোঁজ হয়ে যায়। পুলিশ বহু চেষ্টা করেও তার হদিস পায়নি। শেষে সবাই ধরে নিয়েছিল ছেলেটি বোধহয় অপহরণ বা খুন হয়েছে। কিন্তু বাবা সাগর সেন হার মানেননি। বুকের ভেতর একটা অদ্ভুত অনুভূতি বলত, "সে বেঁচে আছে, কোথাও না কোথাও!" পনেরো বছর পর, ২০২৪ সালে, এক রক্তমাখা চিঠি ডাকঘরে এসে পৌঁছায়। চিঠিতে লেখা— "বাবা, আমি বেঁচে আছি। আমি এমন এক জায়গায় ছিলাম যেখানে সত্য মিথ্যের চেয়েও বেশি অবিশ্বাস্য। আমি ছিলাম মানব পাচারের জালে বন্দি, ভারত থেকে সুদান পর্যন্ত ঘুরেছি। আমাকে নিয়ে গবেষণা চালানো হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, তুমি মরে গেছো। আমি পালিয়েছি। আম...

গল্পে: ভালোবাসা নিঃশব্দ বেদনার নাম

ছবি
  গল্পের নাম: ভালোবাসা নিস্তব্ধ বেদনার নাম ধরন: প্রেম ও বেদনার গল্প ভাষা: বাংলা ভালোবাসা নিস্তব্ধ বেদনার নাম ১ এক শহরের পুরনো এক লাইব্রেরি ছিল—"নিসর্গ পাঠাগার"। সময়ের ছাপ তার গায়ে স্পষ্ট। ধুলোপড়া বইয়ের মাঝে বইপোকাদের আনাগোনা কম, তবে প্রতিদিন দুপুরে ঠিক একটা ছায়া এসে পড়ে দক্ষিণের জানালায়। সেই ছায়ায় একজন নিয়মিত পাঠক বসে— অর্পিতা। চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা, হাতে সবসময় একটা পুরনো ডায়েরি। লেখেন আর আবার কেটে দেন। যেন হৃদয়ের ভেতর থেকে শব্দ খুঁজে বের করে আবার আড়াল করে দেন। ২ অর্পিতার জীবনে হঠাৎ এসে দাঁড়ায় আকাশ একটা কবিতার বই খুঁজতে এসে তার হাতে পড়ে যায় অর্পিতার খোলা ডায়েরির পৃষ্ঠা। লেখা ছিল— "ভালোবাসা কি কেবল শব্দের খেলা? নাকি নিঃশব্দ কান্নার নাম?" আকাশ থমকে গিয়েছিল। অর্পিতা চমকে তাকায়, কিন্তু চোখে রাগ ছিল না। বরং ছিল এক নিঃশব্দ অনুরোধ—"পড়ো, কিন্তু বুঝো না।" ৩ তাদের দেখা হতে লাগলো প্রায়ই। বইয়ের ফাঁকে, চায়ের কাপে, পুরনো কবিতার ভিতর দিয়ে একটুকরো সম্পর্ক জন্ম নিতে থাকলো—নামহীন, অথচ গভীর। অরণ্য হাসতে জানত, অর্পিতা শুনে শুধু চুপ করে থাকত। আকাশ ভালোবাসার কথা বলত, অর্পিতা শ...

একাকীত্ব অন্ধকারে

 একাকীত্ব অন্ধকারে আনিছুর রহমান  গহীন অন্ধকারে, একা হাঁটছিলাম। চারপাশে যেন কোনো শব্দই নেই, শুধুই রাতের কাঁপুনি। হালকা বাতাসের হাওয়ায় পাতারা ছুটছিল, গাছেরা যেন কিছু ছায়া ছড়াচ্ছিল আমার পথের উপর। আমার পায়ের শব্দ একাকীত্বে গুম হয়ে যাচ্ছে, মনে হচ্ছিল আমি একাকী শুধু নয়, আরেক কোনো অদৃশ্য সঙ্গীও আমার সাথে রয়েছে। তখনই আমার বুকের ভিতরটা আতকে উঠলো। হঠাৎ দূরে একটি হালকা আলো জ্বলতে দেখলাম। আলোটা ধীরে ধীরে কাছে আসছিল, আর আমি অজান্তে সেই দিকে এগোতে শুরু করলাম। লাইটের উৎস দেখতে পেতেই মনে হল, কেউ ছোট্ট একটি বাতি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার মুখটা অস্বচ্ছ, কিন্তু চোখগুলো যেন গভীর বিষণ্ণতায় ভরা। আমি থমকে গেলাম, বললাম, “আপনি কে? কেন এদিক থেকে এসেছেন?” সে একটু হাসল, “আমি পথ হারিয়েছি,  ঠিক তোমার মতোই। আমাদের দুজনের চোখে অন্ধকারের মাঝে মিশে থাকা সেই নিস্তব্ধতা খেলা করছিল। তারপর সে ধীরে ধীরে বলল, “ এই গহীন রাতেও, একাকিত্বের ভেতর থেকেও আমরা কেউ না কেউ একসাথে থাকি। তোমার ভয় পেতে হবে না।” আমার হৃদয় একটু শান্ত হল, আর আমি সেই অন্ধকার পথে তার পাশে হাঁটতে থাকলাম। হয়তো গহীন অন্ধকারটাই নয়, আমাদের ভেতরের এক...